Title Title

লালসালু (২০০১)

লালসালু (Lalshalu) | ২০০১
তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত এবং প্রযোজিত চলচ্চিত্র লালসালু (২০০১) বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে একটি অনন্য সংযোজন। এই চলচ্চিত্রটি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর একই নামের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমাটির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, যিনি মজিদের চরিত্রে অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। আরও অভিনয়ে ছিলেন তৌকির আহমেদ, মেহবুবা মাহনূর চাঁদনী, আমিরুল হক চৌধুরী, চিত্রলেখা গুহ, রওশন জামিল, মুনিরা ইউসুফ মেনী এবং আলী জাকের। প্রত্যেকেই তাদের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন, যা চলচ্চিত্রটিকে জীবন্ত করে তুলেছে। চলচ্চিত্রটির সুর করেছেন সৈয়দ শাবাব আলী আরুজ, যার মিউজিক এই সিনেমার আবহ এবং অনুভূতিকে আরও গভীর করেছে। চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন আনোয়ার হোসেন। সিনেমাটি ২০০১ সালে চিত্রা ফিল্মস্ পরিবেশনায় মুক্তি পায় এবং এটি ১১০ মিনিট দীর্ঘ। গল্পের মূল উপজীব্য হলো একটি গ্রামের জীবন, যেখানে ধর্মীয় ভণ্ডামি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং কুসংস্কারের প্রভাব ফুটে উঠচলচ্চিত্রটির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে মজিদ নামক একটি চরিত্রকে ঘিরে, যে একটি গ্রামে এসে নিজেকে পীর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। সে গ্রামের মানুষদের ধর্মীয় আবেগ ও বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করে। একটি পুরোনো মাজারকে ঘিরে ধর্মীয় ভক্তি ও বিশ্বাসকে ব্যবহার করে সে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করে। লালসালুতে, ইসলাম ধর্মের অন্তর্নিহিত মানবিকতা ও নৈতিকতার জায়গায় ধর্মের নামে মজিদের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড সমাজের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে উন্মোচন করেছে। চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে, কিভাবে ধর্মীয় নেতৃত্বের নামে মজিদের মতো ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সমাজের সাধারণ মানুষের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। মজিদ মাজারকে পবিত্র বলে দাবি করে এবং এটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে। এসব বিধিনিষেধ মূলত গ্রামের মানুষদের শোষণ করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই কর্মকাণ্ডগুলোতে ইসলাম ধর্মের প্রকৃত বার্তার সঙ্গে কোনো মিল পাওয়া যায় না; বরং এটি ধর্মের নামে প্রতারণা এবং শোষণের একটি উদাহরণ। কিছু সমালোচক মনে করেন, চলচ্চিত্রটি ইসলামের নামে প্রচলিত কিছু অনুশীলনের ভুল দিক তুলে ধরে ধর্মকে হেয় করার চেষ্টা করেছে। বিশেষত, মজিদ যে ভাবে ধর্মের নামে গ্রামবাসীদের ভয় দেখায় এবং শোষণ করে, তা মুসলিম সমাজের একটি সংবেদনশীল অংশের কাছে ধর্মের প্রতি আক্রমণ হিসেবে ধরা পড়েছে। তাছাড়া, গ্রামীণ মুসলিম সমাজের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আচার-অনুষ্ঠানগুলোর একতরফা চিত্রায়ণ অনেকের মতে পুরো মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে পারেছে।


Title