বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় গোয়েন্দার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা
কনটেন্ট বিশ্লেষণ
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে পিলখানা বিদ্রোহ ও বিডিআর হত্যাকাণ্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ট্র্যাজেডি। এই ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা সহ ৭৪ জন নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিভিন্ন তত্ত্ব উঠে এসেছে, যার মধ্যে একটি হলো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর, বিশেষ করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর সংশ্লিষ্টতার সম্ভাবনা।
এই ঘটনার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র (RAW) এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা ও তত্ত্ব উঠে এসেছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর স্বজনরা বলেছেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ভারতীয়দের সরাসরি যোগসাজোশ ছিলো। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দিন সেনাসদস্যদের আত্মীয়দের যারা জিম্মি করেছেন তাদের মধ্যে অনেকে হিন্দি ভাষায় কথোপকথন করেছে, একজন ভারতীয়সেনা হিন্দিভাষায় বলেছেন। তাদের একজন বলেছেন, পাকিস্তানী বাচ্চাদের একটাও বাঁচিয়ে রাখবো না”।
বিডিআর হত্যাকান্ড মূলত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় সংগঠিত হয়েছে। সম্প্রতি ‘গ্লোবাল বাংলাদেশীজ অ্যালায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস (জিবিএএইচআর)’ এর উদ্যোগে যুক্তরাজ্যর পূর্ব লন্ডনে হোয়াইট চ্যাপেল সেন্টারে বিডিআর ম্যাসাকার ১৫ তম বার্ষিকী, প্রেক্ষাপট দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র" শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে আলোচকরা এ মন্তব্য করেন। সিম্পোজিয়ামে বক্তারা বলেন, ২০০১ সালের ১৫, ১৬ ও ১৯ এপ্রিল সিলেট সীমান্তের 'পদুয়ায়' ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সঙ্গে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। এই তিনটি যুদ্ধেই বাংলাদেশের বিডিআরের জোয়ানরা সাহসিকতার সঙ্গে বিজয় অর্জন করে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার পুলিশ থেকে নিয়োগ করা হলেও বিডিআরের কমান্ডিং অফিসার সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে নিয়োগ করা হতো। যে কারনে বিডিআর ছিল একটি শক্তিশালী প্যারামিলিটারি। সেই পদুয়া থেকে বিডিআর হত্যাকান্ড মূলত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় সংগঠিত হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিডিআরের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত এবং শিক্ষা ও আইনবিদরা বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র ক্রমান্বয়ে বিঘ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। ইস্যুগুলোকে আলোচনার জন্য কোনো আঞ্চলিক ফোরাম নেই। তারা বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তকে অরক্ষিত করে পুরো দেশকে প্রতিবেশী দেশের জিম্মি করা হয়েছে। যা দুই দেশের জন্যই বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তা ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা সুদূর পরাহত থাকবে। বিডিআর ছিল বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষার প্রধান শক্তি, যা ভারতের সাথে দীর্ঘ সীমান্তে সক্রিয় ছিল। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, বিডিআর দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় হলে বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তায় ফাঁক তৈরি হতে পারে, যা ভারতের স্বার্থে উপকারী। পিলখানার এই হত্যাকাণ্ডের পর বিডিআর পুনর্গঠিত হয় এবং নাম পরিবর্তন করে বিজিবি করা হয়। এর ফলে বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো ও শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের সামরিক ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। এ ছাড়াও সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিভক্তি তৈরির সম্ভাবনার কথাও উঠে এসেছে। তবে সরকার ও আন্তর্জাতিক তদন্তে ভারতীয় সংস্থার কোনো সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হয়নি। এই তত্ত্বগুলো প্রমাণের অভাবে এখনো বিতর্কিত।
তথ্যসূত্র:
- প্রথম আলো. (২০২৪, সেপ্টেম্বর ১০). বিডিআর হত্যাপ্রথম আলো. https://www.prothomalo.com/politics/bv6ht5hfo2
- বিবিসি বাংলা. (২০০৯, ফেব্রুয়ারি ২৬). পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ কী? বিবিসি বাংল. https://www.bbc.com/bengali/news/2009-bdr-revolt
- বিডিনিউজ২৪. (২০২৪, ডিসেম্বর ১০). পিলখানা হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা. বিডিনিউজ২৪ বাংলা. https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/31ff46df3ebc
- যুগান্তর. (২০১৯, ফেব্রুয়ারি ২৫). বিডিআর বিদ্রোহের এক দশক: রহস্য এখনও অমীমাংসিত.যুগান্তর. https://www.jugantor.com/news/2009-bdr-rebellion
- সমকাল. (২০১৫, ফেব্রুয়ারি ২৫). পিলখানা হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গুঞ্জন. সমক. https://www.samakal.com/2009-bdr-massacre
- কালের কণ্ঠ. (২০১১, ফেব্রুয়ারি ২৬). বিদ্রোহে প্রকৃত দোষীদের খোঁজে নতুন আলোকপাত.কালের কণ্ঠ. https://www.kalerkantho.com/2009-bdr-killing
- ইত্তেফাক. (২০০৯, ফেব্রুয়ারি ২৭). পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ভারতীয় সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিতর্ক. ইত্তে. https://www.ittefaq.com/2009-pilkhana-incident
- দ্য ডেইলি স্টার. (২০০৯, মার্চ ২). রহস্যময় পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং এর সম্ভাব্য নেপথ্য কারণ.দ্য ডেইলি স্টার. https://www.thedailystar.net/2009-bdr-massacre-analysis
- নয়াদিগন্ত. (২০১৮, ফেব্রুয়ারি ২৬). বিডিআর হত্যাকাণ্ড: রহস্য উন্মোচনের দাবি. নয়াদিগ. https://www.dailynayadiganta.com/bdr-massacre-2009
- ভোরের কাগজ. (২০২৩, ফেব্রুয়ারি ২৫). বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড: ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়ভোরের কাগজ. https://www.bhorerkagoj.net/bdr-rebellion-analysis