ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশে মার্চ ফর গাজা: ঘোষণাপত্র
পর্যালোচনা



বাংলাদেশের জনগণ, মানবাধিকার কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, এবং ছাত্র-যুবকরা একত্রিত হয়ে গাজার জনগণের প্রতি তাদের সহানুভূতি ও সংহতি জানাতে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে ‘বাংলাদেশে মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, গাজার নিরপরাধ মানুষের উপর ইসরায়েলি হামলা ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো এবং তাদের স্বাধীনতার দাবি বিশ্বব্যাপী প্রচার করা। ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রাম এখন এক অগ্নিঝরা পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক শক্তির নিষ্ক্রিয়তা, রাজনৈতিক চাপ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘবপূর্ণ। ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ বিশ্ববাসীকে একটি বার্তা প্রদান করতে চায় যে, ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি আমাদের সংহতি কখনও কমবে না। আমাদের দেশ, স্বাধীনতা, এবং মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য যে সংগ্রাম করেছে, ঠিক তেমনভাবেই ফিলিস্তিনও তার অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে। আমরা বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচারের জন্য গাজা ও ফিলিস্তিনের মানুষরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে এবং বিশ্বের জনগণের সমর্থন ও সংহতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্তরে এই সংকটের সমাধান সম্ভব হবে।
প্রধান উদ্দেশ্য:
১. গাজার জনগণের মানবাধিকার রক্ষা: গাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সামরিক আক্রমণ, বোমাবর্ষণ, খাদ্য সংকট, এবং চিকিৎসা সেবার অভাবে ভুগছে। বাংলাদেশ এই আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে গাজার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে চায়।
২. ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সমর্থন: বাংলাদেশ গাজার স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন জানাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ফিলিস্তিনের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।
৩. বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান: গাজার মানবাধিকার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। গাজার জনগণের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করার জন্য সকল সদস্য দেশগুলোকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
বাংলাদেশের জনগণের সংহতি: বাংলাদেশের জনগণ, যা বিশ্বের অন্যতম মানবিক জাতি হিসেবে পরিচিত, তারা মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রাখে। গাজার জনগণের উপর ইসরায়েলি হামলার ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণের অভ্যন্তরীণ প্রতিবাদ শুধু স্থানীয় সীমাবদ্ধতায় সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি আন্তর্জাতিক স্তরে একটি ঐতিহাসিক প্রতিবাদ হিসেবে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে যে, শুধুমাত্র আমাদের সক্রিয় সমর্থন ও প্রতিবাদই ফিলিস্তিনের মুক্তির সংগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
৪. প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ: এই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ গাজার জনগণের প্রতি তাদের সমর্থন জানাতে একত্রিত হয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ এবং মানবিক কার্যক্রম আয়োজন করবে। এই কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক, সামাজিক, ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো অংশগ্রহণ করবে। প্রতিবাদগুলো থাকবে শান্তিপূর্ণ এবং সবার মধ্যে একতা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত হবে। এই প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার আহ্বান জানাবে এবং গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করবে।
৫. বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান: বাংলাদেশের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি কেবল গাজার জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন নয়, বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক আহ্বানও। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ বিশ্ব সম্প্রদায়কে মনে করিয়ে দেয় যে, ফিলিস্তিনের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে দমন-পীড়নের শিকার, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। গাজা, যা বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, সেখানে মানবিক সংকট দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। বাংলাদেশ আশা করে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজার জনগণের প্রতি সমর্থন জানাতে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেবে।
বাংলাদেশের জনগণের গাজার প্রতি সংহতি এবং প্রতিবাদ জানানো মূলত কয়েকটি কারণ- প্রথমত, গাজার জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গভীর উদ্বেগে ফেলেছে। গাজার ওপর ইসরায়েলি হামলা, সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন, খাদ্য সংকট, এবং চিকিৎসা সেবার অভাব গাজার জনগণের জীবনকে অত্যন্ত দুর্বিষহ করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টির বাইরে পড়ে গেছে, যা বাংলাদেশের মতো দেশকে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ একটি মানবিক দেশ হিসেবে পরিচিত, যেখানে মানবাধিকার রক্ষা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা হয়। বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিনের জনগণের স্বাধীনতা ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। গাজার জনগণ দীর্ঘ সময় ধরে একাধিক আন্তর্জাতিক সমর্থন আশা করলেও, এখনও তাদের দাবি পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি সেই সমর্থন প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকার বিশ্বাস করে যে, একক দেশ বা জাতি হিসেবে তারা কিছুই পরিবর্তন করতে পারবে না, তবে আন্তর্জাতিক চাপ ও একত্রিত আন্দোলনের মাধ্যমে গাজার জনগণের প্রতি দমন-পীড়ন বন্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব। "মার্চ ফর গাজা" কর্মসূচি এ আন্দোলনের এক অঙ্গীকার, যা গাজার স্বাধীনতার জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরি করবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেবে। চতুর্থত, বাংলাদেশের জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ও জোরালো কূটনৈতিক নীতি অনুসরণ করে, তারা এই আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার রক্ষার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়। গাজার জনগণের প্রতি সংহতি এবং তাদের অধিকারের প্রতি আস্থা স্থাপন এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য।
প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ, আয়োজকদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে যারা গাজার জনগণের প্রতি তাদের সহানুভূতি জানাতে একত্রিত হয়েছেন। আয়োজকদের মধ্যে ছাত্র ও যুব সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দল, এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত। এরা সবাই গাজার জনগণের মানবাধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রথমত, আয়োজকদের মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার সংস্থা গুলো, যারা পৃথিবীজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এই সংস্থাগুলো গাজার মানুষের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণ এবং দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের দাবি তুলে ধরার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা আন্তর্জাতিক স্তরে গাজার মানবাধিকার সংকটের সমাধান চেয়ে এসেছে। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দল গুলোও এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ গাজার স্বাধীনতার প্রতি তাদের সমর্থন জানাতে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। এই দলগুলোর উপস্থিতি আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী ও একত্রিত করেছে, এবং দেশের জনগণের মধ্যে গাজার সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সাহায্য করেছে। তৃতীয়ত, ছাত্র ও যুব সংগঠন গুলো এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা গাজার জনগণের পাশে দাঁড়াতে সোচ্চার এবং গাজার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং তারা এই ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চতুর্থত, নাগরিক সমাজ বা সামাজিক সংগঠন গুলো, যারা সমাজের উন্নয়নে কাজ করে, তারা গাজার জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছে। এই সংগঠনগুলো দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিসরে জনসচেতনতা তৈরির জন্য কাজ করছে এবং গাজার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। আয়োজকদের মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা একাত্মতা জানিয়ে গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সমর্থন প্রদান করছেন এবং শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে অবদান রাখছেন।
উৎসঃ
১. ইত্তেফাক, (২০২৫, এপ্রিল ১২)। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ঢাকার ‘মার্চ ফর গাজা, ইত্তেফাক ডিজিটাল
ডেস্ক। https://www.ittefaq.com.bd/727148
২. দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, (২০২৫, এপ্রিল ১২)। গাজা থেকে বাংলাদেশের সহানুভূতি: ঢাকায় ‘মার্চ ফর
গাজা’। https://www.tbsnews.net/bangla/bangladesh/news-details-330646
৩. বিবিসি বাংলা, (২০২৫, এপ্রিল ১২)। 'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচি থেকে কী বার্তা দেওয়া হলো?, বিবিসি
বাংলা। https://www.bbc.com/bengali/articles/cg5qz7e55peo
৪. সমকাল, (২০২৫, এপ্রিল ১২)। ঘোষণাপত্র পাঠে শেষ হলো ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি।
https://samakal.com/capital/article/289893
৫. সময় নিউজ, (২০২৫, এপ্রিল ১২)। ‘মার্চ ফর গাজা’র ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা ধর্ম ডেস্ক:
https://www.somoynews.tv/news/2025-04-12/ZvL0zGvw
৬. দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, (২০২৫, এপ্রিল ১২)। শেষ হলো ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি, ঘোষণাপত্রে এলো
যেসব দাবি, স্টার অনলাইন রিপোর্ট: https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-665426
৭. বিবিসি বাংলা, (২০২৫, এপ্রিল ১২)। 'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ, স্লোগান-প্ল্যাকার্ডে
প্রতিবাদ। https://www.bbc.com/bengali/articles/cdxnvxwn5d2o
৮. প্রথম আলো। (২০২৫, এপ্রিল ১২)। ঘোষণাপত্র পাঠে শেষ ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি, বিপুল মানুষের
উপস্থিতি। https://www.prothomalo.com/bangladesh/f1s3i1x5ge
৯. বাংলাট্রিবিউন, (২০২৫, এপ্রিল ১২)। ‘মার্চ ফর গাজা’ ঘোষণাপত্রে কী আছে । বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট:
https://www.banglatribune.com/others/893903
১০. প্রথম আলো, (২০২৫, এপ্রিল ১২)। সোহরাওয়ার্দীতে গণজমায়েত: ফিলিস্তিনিদের দাবির সঙ্গে
বাংলাদেশের সবাই আছে। https://www.prothomalo.com/politics/znlp5p39m1
১১. যমুনাটিভি, (২০২৫, এপ্রিল ১২)ইউটিউব: https://www.youtube.com/watch?v=e0lCHO7ZqQk।