ইসরায়েল-ভারত মুসলিম নিধনে যোগসাজশ
ফ্যাক্ট বিশ্লেষণ
ইসরায়েল ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে, বিশেষ করে সামরিক এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে। এটি এমন কিছু বিষয়কে সামনে এনেছে যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। দুটি দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে সংঘাত এবং বিদ্রোহ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে মুসলিম জনগণের উপর নির্যাতনের অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে, যেমন ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের উপর। এই প্রেক্ষাপটে, অনেক সমালোচক মনে করেন যে, ইসরায়েল ও ভারতের মধ্যে যে সামরিক সহযোগিতা চলছে, তা মুসলিম জনগণের উপর দমন-পীড়ন কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করছে। তারা এমনও মনে করেন যে, ইসরায়েলের দমননীতি থেকে ভারত শিখছে এবং তা কাশ্মীরে প্রয়োগ করছে। এটি আরও স্পষ্ট হয় সাম্প্রতিক অস্ত্র বিক্রয়, গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান এবং অন্যান্য সামরিক চুক্তির মাধ্যমে।
ইসরায়েল ও ভারতের দমননীতি: ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনি অঞ্চল দখল করে রেখেছে এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক নীতি প্রয়োগ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বেআইনি বসতি স্থাপন, বাড়িঘর ধ্বংস করা, নির্বিচারে আটক এবং সহিংসতা। অন্যদিকে, ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে একই ধরনের কঠোর নীতি অনুসরণ করছে। ২০১৯ সালে ভারত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে সেখানে গুরুতর মানবাধিকার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছে
ইসরায়েল ও ভারতের সামরিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অস্ত্র বিক্রয় এবং সামরিক প্রশিক্ষণ। ইসরায়েল ভারতকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে আসছে এবং ভারতের সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সমালোচকদের মতে, এই সহযোগিতা কাশ্মীরি মুসলিমদের উপর দমন-পীড়নের প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করছে। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরে ইসরায়েলের ‘ড্রোন নজরদারি’ এবং ‘নজরদারি প্রযুক্তি’ ব্যবহারের মাধ্যমে নজরদারি এবং অভিযানের কৌশল বাস্তবায়ন করছে, যা ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে। দমন-পীড়ন কৌশলের মিল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইসরায়েলের ফিলিস্তিনে দমন-পীড়ন কৌশল ও নিরাপত্তা কৌশল থেকে ভারত শিখছে এবং তা কাশ্মীরে প্রয়োগ করছে। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের উপর যে কৌশল প্রয়োগ করছে, যেমন বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ধ্বংস করা, বেআইনি আটক, এবং বন্দী করে রাখা, তা এখন কাশ্মীরের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। এই কৌশলগুলির মধ্যে বিশেষ মিল রয়েছে, এবং ভারত এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা এই মিলগুলিকে আরও সুসংগঠিত করেছে।
কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ইসরায়েলি সমর্থন পাওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা হয়েছে। একইভাবে, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে ইসরায়েলকে দায়ী করছে, সেভাবেই ভারতের ক্ষেত্রেও নিন্দা জানানো হচ্ছে। দুটি দেশই নিজেদের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসাবে নিজেদের নীতি তুলে ধরে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছে, এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনাকে অগ্রাহ্য করে যাচ্ছে।
অস্ত্র বিক্রয় ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব: ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার মূল ভিত্তি হলো অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম। ভারতের সামরিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তির একটি বড় অংশ ইসরায়েল থেকে আসে, যার মধ্যে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এবং স্নাইপার সরঞ্জাম রয়েছে। এই সরঞ্জামগুলো ফিলিস্তিনিদের উপর যেমন ব্যবহৃত হচ্ছে, কাশ্মীরের ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া, দুটি দেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কৌশলগত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি বিনিময় হচ্ছে যা ভারতীয় বাহিনীকে কাশ্মীরে আরও কার্যকরভাবে অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম করছে।
ইসরায়েল এবং ভারতের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতার অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হলো উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা। ইসরায়েল, বিশ্বের অন্যতম উন্নত নজরদারি প্রযুক্তি সরবরাহকারী দেশ হিসেবে, ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীকে ড্রোন, সিসিটিভি, এবং অন্যান্য নজরদারি সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। ভারত এই সরঞ্জামগুলো কাশ্মীরি মুসলিমদের উপর নজরদারি এবং কার্যকরী দমন কার্যক্রমে ব্যবহার করছে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনী যেমনভাবে ড্রোনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে, ভারতও কাশ্মীরে একই ধরনের নজরদারি চালাচ্ছে, যা তাদের স্থানীয় জনগণের উপর নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করছে।
নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা: ইসরায়েল এবং ভারতের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতার অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হলো উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা। ইসরায়েল, বিশ্বের অন্যতম উন্নত নজরদারি প্রযুক্তি সরবরাহকারী দেশ হিসেবে, ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীকে ড্রোন, সিসিটিভি, এবং অন্যান্য নজরদারি সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। ভারত এই সরঞ্জামগুলো কাশ্মীরি মুসলিমদের উপর নজরদারি এবং কার্যকরী দমন কার্যক্রমে ব্যবহার করছে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনী যেমনভাবে ড্রোনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে, ভারতও কাশ্মীরে একই ধরনের নজরদারি চালাচ্ছে, যা তাদের স্থানীয় জনগণের উপর নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করছে।
সামরিক কৌশল ও প্রশিক্ষণ: দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা শুধু অস্ত্র এবং সরঞ্জাম সরবরাহই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এতে সামরিক প্রশিক্ষণও অন্তর্ভুক্ত। ইসরায়েলি বাহিনী কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য বিভিন্ন দমনমূলক কৌশল এবং যুদ্ধকৌশল প্রদর্শন করছে, যা তাদের ফিলিস্তিনে অনেক আগে থেকেই প্রয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের ফলে ভারতীয় বাহিনী দ্রুত দমনমূলক অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছে, যা কাশ্মীরিদের মধ্যে ভীতি এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। ইসরায়েল থেকে নেওয়া এই কৌশলগুলোতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র ব্যবহার, এবং বিশেষ অপারেশন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সামরিক প্রযুক্তির বিনিময় ও উন্নয়ন: ইসরায়েলি সামরিক প্রযুক্তির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার ‘বাধাহীন সংযোগ’ বা তথাকথিত ‘অকুপেশন টেকনোলজি, যা ফিলিস্তিনে বহু বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের বাসস্থান ও চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়, এবং ভারতও কাশ্মীরে একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থা যেমন ‘আইরন ডোম’ এবং উন্নত নজরদারি সরঞ্জাম ব্যবহার করে, ভারতও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে কাশ্মীরে।
নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট করা: ভারতীয় সিনেমা প্রায় এক শতাব্দী ধরে দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে জনপ্রিয়। এই অঞ্চলের অনেক দেশই ভারতীয় উপমহাদেশের অংশ ছিল এবং মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি, ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। বাংলাদেশের অনেক মানুষ বলিউড সিনেমা দেখেন এবং ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রতি গভীর অনুরাগ সৃষ্টির পেছনে প্রযুক্তি ও গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশে মিঠুন চক্রবর্তী, শাহরুখ খান, সালমান খান, আমির খান-সহ দীপিকা পাডুকোন, এবং রানি মুখার্জির মতো অভিনেতাদের জনপ্রিয়তা খুবই বেশি। ভারতীয় সিনেমার গল্পের অনেকাংশই দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ, সংস্কৃতি, ভাষার সাথে মিলে যায়, যা এই অঞ্চলের দর্শকদের কাছে সহজেই গ্রহণযোগ্য। ভারতীয় সিনেমার মধ্যে যে সব থিম ও বিষয়বস্তু (যেমন পরিবার, প্রেম, কৌতুক, গানের দৃশ্য, সামাজিক মূল্যবোধ) বাংলাদেশীদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এছাড়াও মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বলিউড সিনেমা বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেছে। এখানে ভারতীয় অভিবাসীদের সংখ্যা অনেক বেশি, যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো শ্রমিক সংখ্যা মধ্যপ্রাচ্যে বেশি একারণে সম্ভবত ভারতীয় সংস্কৃতির আধিপত্য বেশি এবং তাদের মাধ্যমে বলিউডের সিনেমা ও সংস্কৃতি আরব দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বলিউড সিনেমার প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অগণিত দর্শক রয়েছে। এখানে বড় বড় মাল্টিপ্লেক্স থিয়েটারে বলিউড ছবি প্রদর্শিত হয় এবং তারা ভালো ব্যবসাও করে। সৌদি আরবে সিনেমা হলগুলো সম্প্রতি খোলার পর বলিউড সিনেমার প্রতি আগ্রহ আরও বেড়েছে। যদিও কিছু সামাজিক ও ধর্মীয় সীমাবদ্ধতা থাকলেও, সৌদি আরবে ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মিডিয়া প্রচারণা ও কৌশলগত উপস্থাপন: মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রেও দুই দেশের মধ্যে মিল দেখা যায়। ইসরায়েল যেমন ফিলিস্তিনে নিজেদের কার্যক্রমকে বৈধতা দিতে ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসেবে উপস্থাপন করে, ভারতও কাশ্মীরে একই রকম প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা নিজ দেশের ভেতরে এবং বাইরে এই বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে যে, তাদের কার্যক্রম শুধুমাত্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, যেখানে প্রকৃত ঘটনা হলো, এটি একটি নির্যাতনমূলক এবং দমনমূলক প্রক্রিয়া।
এই ধরনের সহযোগিতা কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আরও বাড়িয়েছে এবং এর মাধ্যমে ভারত নিজের দমনমূলক কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। ইসরায়েলি কৌশল এবং অস্ত্রের সাহায্যে ভারত কাশ্মীরে নতুন করে সামরিক দমন-পীড়ন চালানোর ক্ষেত্রে অনেকটা সফলতা অর্জন করেছে।
ইসরায়েল এবং ভারতের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব যে শুধু ব্যবসায়িক নয়, বরং রাজনৈতিক এবং কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে, তা স্পষ্ট। সমালোচকরা মনে করেন, এই সহযোগিতা দুটি দেশেরই মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দমন-পীড়নকে আরও ত্বরান্বিত করছে। কাশ্মীর এবং ফিলিস্তিনে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর যে ধরনের নির্যাতন চলছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের সামিল, এবং এই যোগসাজশ তা আরও জটিল করে তুলছে। সুতরাং, এই ধরনের প্রক্রিয়া বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক মহলের সচেতনতা ও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।
১ ভারতের ইতিহাস