Title Title

বয়কট কোম্পানি

পেপসিকো ইনক.

ইসরায়েল

বয়কট ব্র্যান্ড

ইভলভ

ইসরায়েল

পেপসিকো ইনকর্পোরেটেড একটি বহুজাতিক কোম্পানি, যা প্রধানত খাদ্য, পানীয় এবং স্ন্যাকস উৎপাদন ও বিপণনে যুক্ত। ১৯৬৫ সালে পেপসিকোলা এবং ফ্রিটো-লের একীভূতকরণের মাধ্যমে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বে পেসসিকো’র ১০০ টির উপরে ব্র্যান্ড নিয়ে ২০০টিরও বেশি দেশে তাদের পণ্য পাওয়া যায়। পেপসিকো ইন্ডিয়া ১৯৮৯ সালে ভারতে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশে পেপসিকো’র পানীয় উৎপাদনকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম বেভারেজেস লিমিটেড (ব্র্যান্ডগুলো: পেপসি, সেভেনআপ, মাউন্টেইন ডিউ, মিরিন্ডা, অ্যাকুয়াফিনা) এবং পেপসিকো’র চিপস ( ব্র্যান্ডগুলো: কুরকুরে, লেই’স ও কোয়েকার এর ওথ খাদ্যপণ্য) উৎপাদনকারী কোম্পানি হলো ট্রান্সকম কনজিউমার প্রোডাক্টস লিমিটেড যা ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে পেপসিকো পণ্য আমদানি শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে। তবে এসময় পেপসিকোর পণ্য সীমিত পরিসরে বাজারে পাওয়া যেত এবং প্রধানত পেপসি কোলা এবং সেভেন আপ এর মতো পানীয় পণ্যই দেশে প্রবেশ করে। ১৯৮০-এর দশকে পেপসিকো মার্কেটিং পলিসির কারণে বাংলাদেশে কোম্পানিটির ব্র্যান্ডিং পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীগণ অধিকাংশ পণ্য ভারত থেকে আমদানি ও দেশে বাজারজাত করে।
পেপসিকো ব্র্যান্ড ‘ইভলভ’ ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি প্ল্যান্ট-ভিত্তিক প্রোটিন ড্রিঙ্ক বিভিন্ন স্বাদে পাওয়া যায় যেমন- ভ্যানিলা বিন, চকোলেট, এবং ক্যারামেল ফ্লেভার, যা প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং সহজপাচ্য। ইভলভ স্বাস্থ্যকর হলেও প্রসেস চিপসের তুলনায় এটি অনেক ভালো বিকল্প। চিপসে থাকা অতিরিক্ত চর্বি, লবণ এবং প্রিজারভেটিভস হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, এবং ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে, ইভলভ প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে শরীরকে সুস্থ রাখে। তবে, যে কোনো প্রক্রিয়াজাত পণ্য পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। 
ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা মুসলিম বিশ্বের নিন্দার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষিতে, পেপসিকোসহ কিছু বহুজাতিক কোম্পানিকে ইসরায়েলের প্রতি পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। পেপসিকো ইসরায়েলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, কোম্পানির বিভিন্ন সহায়ক প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের ব্যবসায়িক কাঠামোতে সরাসরি জড়িত বলে জানা যায়। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিরীহ মানুষের উপর সহিংসতার প্রতিবাদ হিসেবে পেপসিকোর মতো ইসলায়েল সংশ্লিষ্ট বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রতি নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশে পেপসিকো কোম্পানির সব ব্র্যান্ডের পণ্য বয়কটের বিষয়ে আলেম-ওলামাগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আলেম-ওলামারা মনে করেন, ইসরায়েলের অর্থনৈতিক অংশীদারদের বয়কট করে তাদের অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। বিভিন্ন মসজিদে খুতবা ও ধর্মীয় সমাবেশে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তারা জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো পণ্য না কেনার মাধ্যমে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে। এই বয়কট আন্দোলন ইসলামীমূল্যবোধ রক্ষার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশে পেপসিকো’র বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য দেশে আদিপত্য তৈরি করার ফলে দেশীয় কোম্পানিগুলোর ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পেপসিকোর পণ্যগুলোর সহজলভ্যতা ও প্রচারণা গ্রাহকদের দেশীয় পণ্যের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে, পানীয় ও স্ন্যাকস বাজারে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রিতে উল্লেখযোগ্য পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে তারা টিকে থাকতে পারবে না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষার জন্য নীতিমালা জোরদার করা ও বহুজাতিক কোম্পানির বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

Title