Title Title

বয়কট কোম্পানি

পেপসিকো ইনক.

ইসরায়েল

বয়কট ব্র্যান্ড

সেভেন আপ

ইসরায়েল

পেপসিকো ইনকর্পোরেটেড একটি বহুজাতিক কোম্পানি, যা প্রধানত খাদ্য, পানীয় এবং স্ন্যাকস উৎপাদন ও বিপণনে যুক্ত। এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৫ সালে, পেপসিকোলা এবং ফ্রিটো-লের একীভূতকরণের মাধ্যমে। বর্তমানে পেপসিকোর প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের পার্চেজ এলাকায় অবস্থিত। পেপসিকো বর্তমানে ২০০টিরও বেশি দেশে তাদের পণ্য পাওয়া যায়। পেপসিকো ইন্ডিয়া, পেপসিকো ইনকর্পোরেটেডের একটি সহযোগী সংস্থা, ১৯৮৯ সালে ভারতে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশে পেপসিকোর কার্যক্রম পরিচালনা করে ট্রান্সকম বেভারেজেস লিমিটেড (টিবিএল), যা পেপসিকোর একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে। প্রথমে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি প্ল্যান্টের মাধ্যমে প্রতি মিনিটে ৪০০ বোতল উৎপাদন শুরু হয়। বিশ্বে পেসসিকো’র ১০০ টির উপরে ব্র্যান্ড রয়েছে, পেপসিকো’র ব্র্যান্ড ‘সেভেন আপ’ ১৯২৯ সালে চার্লস লেইপারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মূলত একটি লেমন-লাইম ফ্লেভারের সোডা, যা সুগন্ধি ও সতেজ স্বাদের জন্য পরিচিত। ৭ আপ তরুণদের মধ্যে আনন্দ ও স্বস্তি জাগানোর লক্ষ্যে জনপ্রিয়। ব্র্যান্ডের ভেরিয়েশনগুলোর মধ্যে ‘ডায়েট সেভেন আপ’, ‘সেভেন আপ জিরো শুগার’, এবং ‘চেরি সেভেন আপ’।

ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা মুসলিম বিশ্বের নিন্দার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষিতে, পেপসিকোসহ কিছু বহুজাতিক কোম্পানিকে ইসরায়েলের প্রতি পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। পেপসিকো ইসরায়েলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পেপসিকোর বেশ কিছু পণ্য ইসরায়েলে উৎপাদিত হয় এবং সেখান থেকে সারা বিশ্বে রপ্তানি করা হয়। এছাড়াও, কোম্পানির বিভিন্ন সহায়ক প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের ব্যবসায়িক কাঠামোতে সরাসরি জড়িত বলে জানা যায়। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিরীহ মানুষের উপর সহিংসতার প্রতিবাদ হিসেবে পেপসিকোর মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রতি নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, ইসরায়েলের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে জড়িত কোম্পানিগুলোর পণ্য ব্যবহার বন্ধ করে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠানো সম্ভব। সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে সচেতন নাগরিকরাও এই বয়কট আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছেন। এই কর্মসূচি ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সংহতি প্রকাশের একটি অংশ।

বাংলাদেশে পেপসিকো কোম্পানির সব ব্র্যান্ডের পণ্য বয়কটের বিষয়ে আলেম-ওলামাগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আলেম-ওলামারা মনে করেন, ইসরায়েলের অর্থনৈতিক অংশীদারদের বয়কট করে তাদের অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। বিভিন্ন মসজিদে খুতবা ও ধর্মীয় সমাবেশে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তারা জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো পণ্য না কেনার মাধ্যমে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে। এই বয়কট আন্দোলন ইসলামীমূল্যবোধ রক্ষার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশে পেপসিকো কোম্পানির আদিপত্য দেশীয় কোম্পানিগুলোর ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বহুজাতিক এই কোম্পানির বিশাল পুঁজি ও বিপণন কৌশলের কারণে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। পেপসিকোর পণ্যগুলোর সহজলভ্যতা ও প্রচারণা গ্রাহকদের দেশীয় পণ্যের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে, পানীয় ও স্ন্যাকস বাজারে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রিতে উল্লেখযোগ্য পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে তারা টিকে থাকতে পারবে না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষার জন্য নীতিমালা জোরদার করা ও বহুজাতিক কোম্পানির বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বাংলাদেশে পেপসিকো কোম্পানির বিকল্প হিসেবে দেশীয় পণ্য গ্রহণে ক্রেতাদের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় পণ্যগুলোর গুণগত মান উন্নয়ন ও সাশ্রয়ী দামের কারণে অনেক গ্রাহক এখন দেশীয় ব্র্যান্ডের প্রতি ঝুঁকছেন।



Title